ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ (islami university mosque)


ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে যখন আযান ভেসে আসে তখন পূর্ব আকাশে উদীয়মান সূর্যের আলোর উদ্ভাসিত করার পূর্বক্ষণ। কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিনের সুমধুর কন্ঠে ভেসে আসে আযানের ধব্বনি।

অনেক দূর থেকে আকাশছোঁয়া সবুজ গাছপালার মাথা ভেদ করে উঁকি দেয় আকাশের সাথে মিশে থাকা সুউচ্চ গম্বুজ। 

দৃষ্টিনন্দন আকর্ষণীয় স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম নিদর্শন হয়ে থাকবে হাজার বছর। আলো ছড়াবে যুগ যুগ ধরে। থাকবে এই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ এর বিবরণঃ 

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ মীর মোশারফ হোসেন একাডেমিক ভবন ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবনের মাঝখানে অবস্থিত। এই মসজিদটি চারতলা বিশিষ্ট। মসজিদটির বর্গকৃতি ২.২৫ হেক্টর  জায়গা জুড়ে অবস্থিত। 

এ কেন্দ্রীয় মসজিদটি সিরামিক ও কনক্রিট  দিয়ে তৈরি। এই মসজিদে ছোট বড় মোট ১৪ টি গম্বুজ রয়েছে। মসজিদে মাঝখান বরাবর ছাদের উপরে গম্বুজ এর উচ্চতা ৩৬.৫০ মিটার। 

মসজিদে চার কোণায় চারটি ২০০ ফুট উঁচু মিনার রয়েছে। এই মসজিদে প্রবেশ করার জন্য তিনটি দরজা রয়েছে । ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ ভিত্তিক ক্যাম্পাস গড়ার পরিকল্পনা হিসেবে,বিভিন্ন অনুষদ ভবন থেকে ১৫ ফুট প্রস্থের করিডোর স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 

এই চারতলা বিশিষ্ট মসজিদের নিচ তলার আয়তন ৪ হাজার ৭৭১বর্গ মিটার।এই মসজিদে রয়েছে ইসলামিক গ্রন্থাগার ও গবেষণা কেন্দ্র, ক্যাফেটেরিয়া, ইসলামিক ব্যাংক ও বিশ্ব বিদ্যালয় প্রেস।  

মসজিদে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় মোট আয়তন ৭ হাজার ১০০ বর্গমিটার। দ্বিতীয় তলার ৩ হাজার ১০০জন, তৃতীয় তলায় ৮০০ জন ও চতুর্থ তলায় ২ হাজার ৩০০ জন। এই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে মোট ৬ হাজার ২০০ জন মুসল্লী একসাথে নামাজ আদায় করতে পারেন।

মুসল্লির চাহিদা মিটানোর জন্য ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিরামিক ও ইট দ্বারা সুন্দর মসজিদ স্থাপন করা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই মসজিদটি স্থাপন করতে ১ লক্ষ ১ হাজার ১২৫ বর্গফুট জায়গা লেগেছে। 

এই মসজিদে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদের নামাজের জন্য সুব্যবস্থা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক সর্ববৃহৎ ও দেশের তৃতীয় বৃহত্তম মসজিদ এই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ। 

এই মসজিদটিতে ৬ হাজার ২০০ ও ঈদের নামাজের জন্য ১০ হাজার মুসল্লি নামাজ পড়তে পারবেন। ঈদের জামাতের মাঠসহ এই কেন্দ্রীয় জামে মসজিদটিতে মোট ১৬ হাজারের ও বেশি মুসল্লি এক সাথে নামাজ আদায় করতে পারবেন। 

১৯৯৪ সালে এই কেন্দ্রীয় মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়। উপরোক্ত বর্ণনা অনুযায়ী এ মসজিদটির সম্পূর্ণ কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি। সরকারি তৎকালীন অর্থায়নে এই ভিত্তিপ্রস্থর কাজের উদ্বোধন করা হয় । এই মসজিদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিন্ন ভিন্ন খাতে ব্যবহৃত হওয়ায় মসজিদটি কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি। 

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ স্থাপনে খরচঃ

এই বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ ও ইসলামীক পাঠাগার নিমার্ণ বাবদ মোট ব্যায় ধরা হয়েছিলো ২ হাজার ৬৮৯ (৩.৩৬১ মিলিয়ন ইউ এস ডলার) লাখ টাকা। মোট ৪৮০ (০.৮৩ মিলিয়ন ইউ এস ডলার) লাখ টাকা ব্যয়ে বর্তমান কাজ হয়েছে ৩৬ শতাংশ। 

এখনো বাকী ৬৪ শতাংশ কাজ সম্পূর্ণ করতে প্রয়োজন ৪ হাজার ৫০৬ (৫.৬১৬ মিলিয়ন ইউ এস ডলার) লাখ টাকা। মসজিদটি ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ১০ বছর পর ৩৬ শতাংশ কাজ শেষ হলে ২০০৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী জনাব মোশারফ হোসেন শাহজাহান উদ্বোধনের মাধ্যমে নামাজের জন্য মসজিদটি উন্মুক্ত করে দেন। 

দীর্ঘ ১৩ বছট ধরে মসজিদটি উন্নয়ন করা যাচ্ছিল না,হারাতে বসেছিল এই অপরূপ সৌন্দর্য কারুকার্য। দীর্ঘ ২৪ বছর পর বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে মসজিদটি পূরিপূর্ণ রূপ । 

আরো পড়ুন ঃ 

বর্তমানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য অধ্যাপক ড.মোঃ হারুন-উর-রশিদ আসকারি অবকাঠামোগত উন্নয়ন, গবেষণা ধমী, শিক্ষা কার্যক্রম, আবাসিক সুবিধা নিশ্চিতকরন, বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানে উন্নতি করার জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। 

২০১৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর শুক্রবার জুম্মা নামাজের পর মসজিদের সম্প্রাসরন কাজের উদ্বোধন করেন। এই মসজিদটির জন্য বরাদ্দ হয়েছিলো ৪ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা। 

মসজিদের মাঝখানে পূর্বদিকে বায়তুল মোকাররাম মসজিদের ন্যায় চওড়া সিঁড়ি ও তৈরি হবে। এ মসজিদটির ৪ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকার ১৫ শতাংশ সম্পূর্ণ হবে এবং ১৫ শতাংশ কাজ শেষ হবে ২০১৯ সালের জুন মাসে নাগাদ।

দীর্ঘদিন যাবৎ মসজিদের কাজটি বন্ধ ছিল। বর্তমান প্রশাসন ইতিমধ্যে প্রায় ৫ কোটি টাকা টেন্ডার নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। বাকি কাজগুলো করার জন্য আমরা ৪০ কোটি টাকা ' কুয়েত জয়েন্ট রিলিফ ' কমিটি বরাবর আবেদন করেছি । 

সেই কমিটির সাথে আমাদের প্রতিদিন যোগাযোগ হয়,আশা করা যাচ্ছে তারা আমাদেরকে সাহায্য করবে। আমরা আগামী চার বছরের মধ্যে মসজিদটি পূর্ণাঙ্গ রূপ দেখতে পারবো।

উপচার্য অধ্যাপক ড.মোঃ হারুন-উর-রশিদ আসকারী বলেন, মসজিদের মূল নকশার কাজ পরিপূর্ণ হলে, এই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদটি বাংলাদেশের তথা বিশ্বের সবচেয়ে অন্যতম সেরা মসজিদ রূপান্তরিত হবে। 

No comments:

Post a Comment