পৃথিবীতে সর্বাধিক পঠিত গ্রন্থ হচ্ছে আল কুরআন। মুসলমান জাতির শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর এই গ্রন্থ নাযিল হয়।
এই দুনিয়ার সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ জীব্রাইল (আঃ) এর মাধ্যমে এই গ্রন্থ অবতীর্ণ করেন। এই মহান গ্রন্থ যখন অবতীর্ণ করেন তখন মহানবী হেরা গুহায় ধ্যানরত ছিলেন।
কুরআনের প্রথম ওহী
‘পড়ো তোমার প্রভুর নামে যিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন।’(সূরা আলাক ১-৫)
কুরআনের সর্বশেষ ওহী
‘সে দিনকে ভয় করো যেই দিন তোমাদের সবাইকে আল্লাহর কাছে ফিরিয়ে নেয়া হবে ।’(সূরা আল বাকারা ২৮১)
সুরা ইসলামী পরিভাষায় একটি অধ্যায়। তবে মজার কথা হলো এই পরিভাষা শুধু ইসলামী পরিপুর্ন জীবন বিধান কুরআনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আর এটা শুধু কুরআনের ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়।
আল কুরআনে মোট ১১৪ টি সুরা রয়েছে। যা আমাদের নয়নের মণি হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর উপর নাযিল হয়েছেন। তাও কিন্তু একদিনে নয়। সুদীর্ঘ ২২ বছর ৫ মাস সময় ব্যাপিয়া এটি নাযিল হয়।
১১৪ টি সুরা কে আবার বিভিন্ন আয়াতে বিভক্ত করা হয়েছে।কুরআনের প্রথম সুরা হলো 'সুরা আল ফাতিহা'।শেষ সুরার নাম হলো 'সুরা আন-নাস'।
সুরাগুলোর মধ্যে দীর্ঘতম সুরা হলো সুরা আল বাকারা যেখানে ২৮৬টি আয়াত রয়েছ।নিশ্চয় জানতে ইচ্ছা করছে সবচেয়ে ছোট সুরা কোনটি। আপনার এই সুরাটির নাম সবাই জানেন।
শুধু নাম জানেন তা নয় মুখস্তও আছে। সুরাটি নাম হচ্ছে সুরা আল কাউসার। যার আয়াত সংখ্যা মাত্র ৩টি।
একমাত্র সুরা হচ্ছে "তাওবা" যার শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম দিয়ে শুরু হয় নাই।আর সকল সুরা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম দিয়ে শুরু হয়েছ।
তবে আরো একটি ব্যতিক্রম আছে তা হলো "সুরা আন নামল"। যেখানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম মোট দুইবার উল্লেখ করা হয়েছ।
কুরআনের আরো কিছু বিষয়াদিঃ
শব্দ সংখ্যাঃ বিভিন্ন মতামত আছে। তবে যে সংখ্যাটি সাধারণভাবে প্রসিদ্ধ লাভ করছে তা হচ্ছে ৮৬৪৩০ ।
আয়াতের সংখ্যাঃ এক্ষেত্রেও বিভিন্ন মতামত আছে। তবে হযরত আয়েশা (রঃ) মতে আয়াত আছে ৬৬৬৬ টি।ঐতিহাসিকদের মতে হযরত আয়েশা (রঃ) এ গণণাই বেশি প্রসিদ্ধ লাভ করেছে।
বিষয়ভিত্তিক আয়াতঃ
জান্নাতের ওয়াদা ১০০০,
জাহান্নামের ভয় ১০০০,
নিষেধ ১০০০,
আদেশ ১০০০,
উদাহারণ ১০০০,
কাহিণী ১০০০,
হারাম ২৫০,
হালাল ২৫০,
আল্লাহর পবিত্রতা ১০০,
বিবিধ ৬৬ ।
পবিত্র গ্রন্থ নাযিলের শুরু হলো যেভাবেঃ
নাযিলের অনেক আগে প্রায় ছয় মাস আগে থেকেই আল্লাহ তায়ালা মোহাম্মদ (সঃ) কে স্বপ্নের মাধ্যমে এ মহান কাজের জন্য প্রস্তুত করে নিচ্ছিলেন। ইতিহাসের বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত অনুযায়ী প্রথম ওহী এসেছিল রমযান মাসের ২১ তারিখ সোমবার রাত্রে। মোহাম্মদ (সঃ) এর বয়স ছিল তখন ৪০ বছর ৬ মাস ১২ দিন।
কুরআন লিপিবদ্ধকরণ
যখন থেকে কুরআন নাযিল শুরু হয়,সেদিন থেকেই আল্লাহ রাসূল তা লিপিবদ্ধ করে রাখার জন্য পারদর্শী সাহাবীদের নিযুক্ত করেন।হযরত যায়দ বিন সাবেত (রঃ) ছাড়া আরো ৪২ জন সাহাবী এ কাজে নিযুক্ত ছিলেন । এ সম্পর্কে রাসূল (সঃ) বলেন, তোমরা আমার কাছে কুরআন ছাড়া অন্য কিছু লেখো না।
১।সুরা আল ফাতিহা। মক্কায় অবতীর্ণ প্রথম সুরা। আয়াত সংখ্যা ৭ টি। বাংলা মানে হচ্ছে সুচনা।
২। সুরা আল বাকারাহ। মদিনায় অবতীর্ণ। কুরআন শরীফের ২য় সুরা। আয়াত সংখ্যা ২৮৬ টি। বাংলা মানে হচ্ছে বকনা বাছুর।
৩।সুরা আল ইমরান। মদিনায় অবতীর্ণ। ৩য় সুরা কুরআন শরীফের। আয়াত সংখ্যা ২০০টি। বাংলা মানে হচ্ছে ইমরানের পরিবার।
৪।সুরা আন নিসা। মদিনায় অবতীর্ণ। ৪র্থ সুরা । আয়াত সংখ্যা ১৭৬ টি। বাংলা মানে হচ্ছে নারী।
৫।সুরা আল মায়িদাহ। মদিনায় অবতীর্ণ। ৫ম সুরা। আয়াত সংখ্যা ১২০টি। বাংলা মামে হচ্ছে খাদ্য পরিবেশিত টেবিল।
৬।আল আনআম (গৃহপালিত পশু)। মক্কায় অবতীর্ণ।কুরআনের ৬ নম্বর সূরা, এর আয়াত সংখ্যা ১৬৫টি এবং এর রূকুর সংখ্যা ২০টি। এই সূরাতে আল্লাহর একত্ববাদ, পূণরুত্থান, জান্নাত এবং জাহান্নাম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
৭।সুরা আল আরাফ (উচু স্থানসমুহ)।এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। কুরআনের সপ্তম সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ২০৬টি । এর রূকুর সংখ্যা ২৪টি। এই সূরার কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু হচ্ছে রিসালাতের প্রতি ঈমান আনার দাওয়াত।
৮।আল আনফাল (যুদ্ধে-লব্ধ ধনসম্পদ)। কুরআনের ৮ নম্বর সূরা, এর আয়াত সংখ্যা ৭৫ টি। আল আনফাল সূরাটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। অধিকাংশ বর্ণনা যুদ্ধে লব্দ সম্পদের বিষয়ে।
৯।আত তাওবাহ্ (অনুশোচনা)। এই সূরাটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ১২৯ টি। আরবি তওবা অর্থ ক্ষমা। একে সূরা তওবা বলা হয়, কারণ এতে মুসলমানদের তওবা কবুল হওয়ার বর্ণনা রয়েছে।
১০।ইউনুস (নবী ইউনুস)। কুরআনের দশম সূরা। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ১০৯ টি।
১১।হুদ (নবী হুদ)। কোরআন-এর ১১তম সূরা হুদ তার নামে নির্দেশ করা হলেও এই সূরাটিতে তার সম্পর্কে সামান্য কিছু বর্ণনা রয়েছে। আল্লাহর গজবে ধ্বংসপ্রাপ্ত বিশ্বের প্রধান ছয়টি জাতির মধ্যে নূহের পরেই হূদের জাতি আদ ছিল। মক্কায় অবতীর্ণ।যার আয়াত সংখ্যা ১২৩।
১২।ইউসুফ (নবী ইউসুফ)। কুরআনের ১২তম সূরা, এর আয়াত অর্থাৎ বাক্য সংখ্যা ১১১ এবং এর রূকু তথা অনুচ্ছেদ সংখ্যা ১২। সূরা ইউসুফ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।
১৩।আর রা’দ (বজ্রপাত)। কুরআনের ১৩ তম সূরা, এর আয়াত সংখ্যা ৪৩টি। আর-রাদ সূরাটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে।
১৪।ইব্রাহীম (নবী ইব্রাহিম)।কুরআনের চৌদ্দতম সূরা। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ৫২ টি।
১৫।আল হিজর (পাথুরে পাহাড়)। কুরআনের পনেরতম সূরা। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ৯৯টি।
১৬।আন নাহল (মৌমাছি)।কুরআনের ষোলতম সূরা। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ১২৮টি।
১৭।বনী-ইসরাঈল (ইহুদী জাতি)।কুরআনের ১৭ তম সূরা, এর আয়াত সংখ্যা ১১১ টি এবং এর রূকুর সংখ্যা ১২ টি। বনী-ইসরাঈল সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।
১৮।আল কাহফ (গুহা)।কুরআনের ১৮ তম সূরা৷ এর আয়াত সংখ্যা ১১০ টি এবং এর রূকুর সংখ্যা ১২ টি। আল কাহফ সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সূরায় কোরাইশদের তিনটি প্রশ্নের কথা এবং প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে। এই সূরায় হযরত মুসা এবং হযরত খিযির এর ঘটনাটিও বর্ণনা করা হয়েছে।
১৯।মারইয়াম (মারইয়াম, ঈসা নবীর মা)।কুরআনের ১৯ নম্বর সূরা। আয়াত অর্থাৎ বাক্য সংখ্যা ৯৮ এবং রূকু তথা অনুচ্ছেদ সংখ্যা ৬। সূরা মারইয়াম মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সূরাটির প্রথমে হযরত জাকারিয়া এর প্রার্থনার কথা, পরে বিবি মারইয়াম এবং পুত্র হযরত ঈসা-এর সম্পর্কে বলা হয়েছে।
২০।ত্বোয়া-হা (ত্বোয়া-হা)।কুরআনের বিশতম সূরা। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ১৩৫ টি।
২১।আল আম্বিয়া (নবীগণ)।কুরআনের একুশতম সূরা। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ১১২ টি।
২২।আল হাজ্জ্ব (হজ্জ)। কুরআনের ২২তম সূরা। এই সূরাটি মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর আয়াত সংখ্যা ৭৮। সুরাটি মূলত মুসলমানদের অবশ্য পালনীয় ধর্মীয় কর্ম হাজ্জ্ব এবং হাজ্জ্ব সংক্রান্ত দিকটি বেশি উম্মচিত হয়েছে।
২৩।আল মু’মিনূন (মুমিনগণ)।২৩ তম সূরা। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ১১৮টি। মমিনদের হেদায়েতের জন্য রয়েছে আল কুরআনের সেরা উক্তি সমুহ।
২৪।আন নূর (আলো)।কুরআনের ২৪ তম সূরা। সূরার নামের বাংলা অর্থ আলো। এটি মাদানী সূরা।এ সূরায় হযরত আয়েশা রা. এর উপর দেওয়া অপবাদ খন্ডন করা হয়েছে।
২৫।আল ফুরকান (সত্য মিথ্যার পার্থক্য নির্ধারণকারী গ্রন্থ)। কুরআনের ২৫ তম সূরা। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ সূরার আয়াত সংখ্যা ৭৭টি এবং রুকু সংখ্যা ৬ টি ।
No comments:
Post a Comment