নামাজ সহি ও শুদ্ধভাবে আদায় করতে হলে যে বিষয় গুলো মানতে হবে। সেগুলোকে অবশ্য পালনীয় বলতে হবে। নামাজের রয়েছে ১৩ টি ফরজ ও ১৪ টি ওয়াজিব।যা আপনাকে মেনে নামাজ আদায় করতে হবে। এখন জানার বিষয় ফরজ এবং ওয়াজিব কাকে বলে।
প্রথমে আসি "ফরজ কাকে বলে?"
ফরজ একটি ইসলামী শব্দ যা অবশ্য কর্তব্য কোন ধর্মীয় আচারকে নির্দেশ করে।মুসলিমদের যা অবশ্য পালন করতে হবে।
ফরজঃ ফরজ ওই আদেশমূলক বিধানকে বলা হয় যা অকাট্যভাবে প্রমাণিত এবং তার অকাট্যতার ওপর নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস রাখা ও আমল করা অপরিহার্য। কোনো ওজর ব্যতীত তা ত্যাগকারীকে ‘ফাসিক’ বলে গণ্য করা হয়
এবং তার অস্বীকারকারীকে ‘কাফির’ বলে গণ্য হয়।
ফরজ কে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমটি হচ্ছে ফরজে আইন ও দ্বিতীয়টি হচ্ছে ফরজে কিফায়া।
ফরজে আইনঃ ফরজে আইন হচ্ছে ওই ফরজ বিধান, যার ওপর প্রত্যেক দায়িত্বশীল তথা প্রাপ্তবয়স্ক বিবেকবান মুসলিমের আমল করা অপরিহার্য। একজন বা এক দলের আমলের কারণে অন্যরা বা অন্যদল দায়িত্বমুক্ত হয় না। দায়িত্বশীল প্রত্যেক মুসলিমের ওপর অত্যাবশকীয় পালনীয়। উদাহরণ হিসাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের কথা বলা যায়। এই রকম আরো উধাহরণ হলো জাকাত, রমজানের রোজা ও হজ এবং প্রয়োজনী জরুরি দ্বিনি ইলম অর্জন ইত্যাদি।
ফরজে কিফায়াঃ ফরজে কিফায়া ওই সকল ফরজ বিধান যা প্রত্যেক দায়িত্বশীল মুসলিমের ওপর ব্যক্তিগত পর্যায়ে অপরিহার্য হয় না, বরং মুসলিম সমাজের ওপর এমনভাবে আরোপিত হয় যে এক দল মুসলিম তা সঠিকভাবে আমলের মাধ্যমে অন্যরা দায়িত্বমুক্ত হয়ে যায়, তবে কেউ তা না করলে সকলেই গোনাহগার হবে। যথা পরিপূর্ণ দ্বিনি জ্ঞানার্জন করা, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধা প্রদান এবং মুসলিম জাতির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ ইত্যাদি।
এর পর আসি "ওয়াজিব কাকে বলে?" সেই বিষয় নিয়ে বলবো।
ওয়াজিব কাজ হচ্ছে ফরজের ন্যায় অবশ্য করণীয়। তবে পার্থক্য এতটুকু যে, কোন মুসলমান ফরজ অস্বীকার করলে কাফের হয়ে যায় কিন্তু ওয়াজিব অস্বীকার করলে সে কাফের হবে না, তবে ফাসেক হয়ে যায়। যেমন- বেতরের নামাজ পড়া, কুরবানী করা, ফেতরা দেয়া ইত্যাদি।
ওয়াজিব মুসলিম সমাজে বহুল প্রচলিত একটি শব্দ।
এবার নামাজের ফরজ সমুহ নিয়ে আলোচনা করি।নামাজের ফরজ কে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
১।নামাজ শুরুর পূর্বের ফরজ ঃ নামাজ শুরুর পুর্বের ৭ টি ফরজ।
# নামাজ পড়ার পুর্বে অবশ্যই শরীল পাক হতে হবে।
# পরিধেয় বস্ত্র অবশ্যই পাক হতে হবে।
# যেস্থানে নামাজ আদায় করা হবে তা পাক হতে হবে।
# সতর পরিপুর্ন ভাবে ঢাকতে হবে।
# কেবলা মুখী হয়ে দাঁড়াতে হবে।
# নিয়ত করা।
#ওয়াক্ত অনুযায়ী নামাজ পড়া।
২। নামাজ শুরুর পরের ফরজ ঃ নাজাযের মাঝে ৬টি ফরজঃ
# তাকবিরে তাহরিমা বলে নামাজ শুরু করা ।
# কেযাম বা সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে।
# কেরাত পড়া
# রুকু করা।
# সেজদা করা।
# নামাযে শেষে বৈঠকে বসা ও সালাম ফেরানো।
কোন একটি ফরজ ছুটে গেলে নামাজ হবে না। পুনরায় নামাজ আদায় করতে হবে।
নামাযের ওয়াজিব ১৪ টি।এখানে নামাজের ওয়াজিব সমুহ বর্ননা করা হলো। ওয়াজিব সমুহ হলো:
১। সুরা ফাতিহা শুদ্ধভাবে পুরা পড়া।.
২। ফাতিহার সাথে অন্য একটি সুরা মিলিয়ে পড়া।.
৩। রুকু সেজদায় দেরী করা।
৪। রুকু হতে পুরোপুরি সোজা হয়ে খাড়া দাড়ানো।.
৫। দুই সেজদার মাঝখানে মেরুদন্ড সোজা হয়ে বসা
৬। বৈঠক করা ( ২রাকাত নামায হলে এক বৈঠক, ৩ রাকাত নামায হলে ২ বার বৈঠক এবং ৪ রাকাত নামায হলে ২ বার বৈঠক করা)
৭। বৈঠকে বসে আত্তাহিয়াতু পড়া।
৮। ইমামের জন্য ক্বিরাত আস্তে পড়া( যহুর ও আছর নামায) এবং জোড়ে পড়া(ফজর, মাগরিব, ইশা)
৯। বিতরের নামাযে দোয়া কুনুত পড়া।
১০। দুই ঈদের নামাযে অতিরিক্ত তাকবির বলা।
১১। প্রত্যেক ফরয নামাজের প্রথম ২ রাকাতকে ক্বিরাতের জন্য ঠিক করা।
১২। প্রত্যেক রাকাতের ফরজগুলির তারতীব ঠিক রাখা।
১৩। প্রত্যেক রাকাতের ওয়জিবগুলির তারতীব ঠিক রাখা।
১৪। আসসালামু আলাইকুম বলে নামায শেষ করা ।
ওয়াজিব ছুটে গেলে সিজদা সাহু দিতে হবে । না হলে নামাজ শুদ্ধ হবে না।