তারা মসজিদ (Star Mosque) বাংলাদেশের জনপ্রিয় ইসলামিক স্থাপনা

star mosque


পুরান ঢাকার হাজারো ঐতিহাসিক ইসলামী স্থাপনার মাঝে তারা মসজিদ অন্যতম।এই শহ‌রের য‌ত ঐতিহা‌সিক মস‌জিদ আছে তার বে‌শির ভাগই পুরান ঢ‌াকায় অব‌স্থিত। 

তারা মসজিদ বর্তমান পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় আবুল খয়রাত সড়কে অবস্থিত। ধবধবে শুভ্র মার্বেলের গম্বুজের ওপর নী্লাভ তা্রকা খচিত এ মসজিদ নির্মিত হয় আনুমানিক আঠারো শতকের প্রথম দিকে। 

মসজিদের গায়ে এর নির্মাণ-তারিখ খোদাই করা ছিল না। তবে ধারণা করা হয় ১৮ শতকের শুরুর দিকে তৎকালীন ঢাকার জমিদার মির্জা গোলাম পীর তারা মসজিদ নির্মাণ করেন।তবে, মসজিদটি তৈরির পর ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে মির্জা গোলাম পীর মৃত্যুবরণ করেন।

ঝকঝকে এই মসজিদের বিভিন্ন নাম রয়েছে। মোঘল স্থাপত্য কৌশলে নির্মিত মসজিদটি অনেকের কাছে সিতারা মসজিদ বা মির্জা গোলাম পীরের মসজিদ নামে পরিচিত।

সতের শতকে দিল্লি, আগ্রা ও লাহোরে নির্মিত বিভিন্ন মোঘল স্থাপত্য শৈলী অনুসরণে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল।

কেন বলা হয় তারা মসজিদ?

দরজাগুলির মধ্যবর্তী ও বাইরের প্রাচীরটি গ্ল্যাজড টাইলসগুলিতে মাউন্ট ফুজির মোটিফ দিয়ে সজ্জিত এবং একটি ক্রিসেন্ট-ও-স্টার ডিজাইন দিয়ে সম্মুখের উপরের অংশটি সজ্জিত করা হয়েছে। 

সাদা মার্বেলের গম্বুজগুলিতে কয়েকশ নীল তারা তৈরি করা হয়েছে। সমস্ত মসজিদ জুড়ে, তারাগুলির মোটিফ সাজসজ্জার উপর প্রাধান্য দেয় এবং তাই মসজিদটিকে বলা হয় স্টার মসজিদ (বাংলায় তারা মসজিদ)।

মসজিদের প্রাথমিক আকার ও আকৃতিঃ 

যখন শুরু করা হয় তখন থেকেই মসজিটি আয়তাকার ছিল। মির্জা গোলাম পীর তৈরির আদি ও আসল মসজিদটির পরিমাপ ছিল দৈর্ঘ্য ৩৩ ফুট (১০.০৬ মিটার) এবং প্রস্থে ১২ ফুট (৪.০৪ মিটার), গম্বুজ ছিল সর্বসাকুল্যে তিনটি। 

এর ভিতরে মাঝের গম্বুজটি অনেক বড় ছিল। সাদা মার্বেল পাথরের গম্বুজের উপর নীলরঙা তারার নকশা যুক্ত ছিল।এর পূর্ব দিকে মসজিদে প্রবেশর জন্য তিনটি এবং উত্তর দিকে ১টি এবং দক্ষিণ দিকে ১টি দরজা ছিল।

মসজিদের সংস্করণঃ 

১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার তৎকালীন স্থানীয় ব্যবসায়ী, আলী জান বেপারী মসজিদটির সংস্কার করেন। এই সময় মসজিদটির আকার বৃদ্ধি করা হয়। এই সময় এর পূর্বদিকে একটি বারান্দা যুক্ত করা হয়। 

এই সময় মসজিদের মেঝে মোজাইক করা হয়। চিনিটিকরি (Chinitikri) কৌশলের এই মোজাইক তৈরীতে ব্যবহার করা হয় জাপানী রঙিন চীনা মাটির টুকরা এবং রঙিন কাঁচের টুকরা। 

১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে এই মসজিদটির পুনরায় সংস্কার করা হয়। এই সময় পুরনো একটি মেহরাব ভেঙে দুটো গম্বুজ আর তিনটি নতুন মেহরাব বানানো হয়। সব মিলিয়ে বর্তমানে এর গম্বুজ সংখ্যা পাঁচটিতে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে মসজিদের জায়গা সম্প্রসারিত হয়। 

মসজিদের বর্তমান আকারঃ

মসজিদের বতর্মান দৈর্ঘ্য ৭০ ফুট (২১.৩৪ মিটার), প্রস্থ ২৬ ফুট (৭.৯৮ মিটার)। এছাড়া মসজিদের দেয়ালে ফুল, চাঁদ, তারা, আরবি ক্যালিওগ্রাফিক লিপি ইত্যাদি দিয়ে সাজানো হয়েছে।

কিভাবে যাবেন

বাংলাদেশের যে কোন জায়গা থেকে ঢাকাতে আসতে হবে। ঢাকা শহরের যেকোন জায়গা থেকে পুরান ঢাকার চানখাঁরপুল এলাকায় আসতে হবে। এসে রিকশা দিয়ে সহজেই আরমানিটোলা যেতে পারবেন। চানখাঁরপুল থেকে তারা মসজিদে যেতে মাত্র ৩০ টাকার মত রিক্সা ভাড়া লাগতে পারে।

কাকরাইল মসজিদ - বাংলাদেশের তাবলীগ জামাতের প্রধান কেন্দ্র (kakrail mosque - bangladesh)

কোথায় খাবেন

পুরান ঢাকার মুখোরোচক খাবারের জন্য রয়েছে দেশ জোড়া খ্যাতি। খাবারের জন্য পুরান ঢাকার রয়েছে বিশেষ ঐতিহ্য। আল রাজ্জাক, হাজীর বিরিয়ানি, কাশ্মির কাচ্চি, বিউটি বোডিং কিংবা সুলতানের চা থেকে নিঃসন্দেহে খাবারের আইটেম বেছে নিতে পারেন।ঐতিহাসিক স্থাপনা দেখার পাশাপাশি রসনা বিলাশ হতে পারে আপনার জন্য বাড়তি পাওয়া।

আশে পাশে আর কি দেখবেন?

  • রোজ গার্ডেন, 
  • আহসান মঞ্জিল, 
  • শহীদ মিনার, 
  • ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, 
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, 
  • দোয়েল চত্তর, 
  • সরোয়ার্দী উদ্যান, 
  • চারুকলা ইনস্টিটিউট, 
  • জাতীয় জাদুঘর, 
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক মিলন কেন্দ্র।


তারা মসজিদ (তারা মসজিদ) দেখার জন্য টিপস

নামাজের সময় মসজিদে বেড়াতে যাবেন না। মহিলাদের জন্য, মাথা হিজাব পড়ে মসজিদে প্রবেশ করা প্রয়োজন। এছাড়াও, পরিমিত পোশাক পরতে হবে। শর্টস পরে মসজিদে প্রবেশ করা নারী পুরুষ উভয়ের পক্ষে সম্ভব হবে না।

মসজিদটি সাধারণত নামাজের সময় বাইরে বন্ধ থাকে তবে আপনি যদি জিজ্ঞাসা করেন তবে মসজিদটির তত্ত্বাবধায়ক আপনাকে যে কোনও সময় দেখার জন্য এটি খুলবে।

আপনি কি কখনও স্টার মসজিদ (তারা মসজিদ) পরিদর্শন করেছেন? মন্তব্যগুলিতে আমাদের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

No comments:

Post a Comment