বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর মসজিদ (The World’s Most Beautiful Mosques)



বিশ্বের সেরা দশটি সবচেয়ে সুন্দর মসজিদ ( The world's 10 most beautiful mosques )


মসজিদ বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের উপাসনালয় হিসাবে এক সহস্রাধিক সময়েরও বেশি সময় ধরে রয়েছে। আজ অবধি, এই পবিত্র স্থানগুলির সৌন্দর্য এবং সমৃদ্ধ ইতিহাস দর্শনার্থীদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে। 

আমরা সারা বিশ্ব থেকে 10 টি চমকপ্রদ মসজিদ তালিকাভুক্ত করেছি যা আপনাদের ইসলামী স্থাপনা ও এতিহ্য সম্পর্কে চিন্তা করার সুযোগ তৈরী করবে।

দ্বিতীয় হাসান মসজিদ, মরক্কো (Hassan II Mosque)

মরক্কোর সবচেয়ে বড় এবং সুন্দর মসজিদ। সুউচ্চ গুম্বজ বিশিষ্ট মসজিদের মিনারের উচ্চতা ২১০ মিটার। বিশ্বের বৃহত্তম মসজিদসমূহের মধ্যে এটি স্বনামধন্য একটি। মরক্কোর সাগর পাড়ের শহর কাসাব্ল্যাংকা'য় দ্বিতীয় হাসান মসজিদটির গর্বিত অবস্থান। 

Hassan II mosque - www.islamiblogbd.com


মসজিদটির একাংশ পানির উপর অবস্থান করছে।তাই একে ভাসমান মসজিদও বলা হয়।এটি  একটি মসজিদ মাত্র নয়। অবিশ্বাস্য সুন্দর এ স্থাপনার আশে পাশের আয়োজন এক কথায় বিস্ময়কর। 

এ মসজিদে প্রবেশের পর পর্যটকদের কিছুক্ষণের জন্য হলেও স্তব্ধ হয়ে থাকতে হয় এর বিশালতা ও বিস্ময়কর আয়োজন দেখে। এর আর্কিটেকচার, নান্দনিকতা, অলঙ্করণ, মহা মূল্যবান দ্রব্যাদি আর হাজারো রঙের ব্যবহার এবং সমন্বয়ের কাছে পৃথিবীর বড় বড় তারকাধারী হোটেল আর মহামু্ল্যবান রাজ প্রাসাদের সৌন্দর্যও ম্লান। 

মসজিদের সামনে পা রাখা মাত্র মনে হবে এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম সবচেয়ে সুন্দর কোনো প্রাসাদ বা দুর্গ। ঘোড়ার পায়ের ক্ষুরাকৃতির খিলানে মার্বেল পাথর, গ্রাইনাইট আর রঙের যে ব্যবহার করা হয়েছে তাতে এ অনুভূতি জাগে দর্শকদের মনে।

আর মসজিদের ভেতরের মেঝে, খিলন, খুঁটি, সিলিং, লাইটিং, মূল্যবান দ্রব্যাদির অলঙ্করণ, লাইটিংয়ের সাজসজ্জা মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার মতো। চোখে না দেখলে এর সৌন্দর্য বর্ণনা করার মতো নয়।বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসলিম ছাড়াও অমুসলিম পর্যটকের পদভারে মুখরিত থাক এ সারা বছর।

শব্দ এবং পরিবেশদূষণ মুক্ত এবং সাগরের নির্মল বাতাস মুসল্লিদের মনে নিঃস্পাপ এক অনুভূতি সৃষ্টি করে। মসজিদে রয়েছে ইসলামিক লাইব্রেরি, জাদুঘর, হাম্মামখানা, মাদরাসা, ঝর্ণা, বিশ্রামাগার। 

মসজিদ ঘিরে থাকা বাগান একটি জনপ্রিয় পারিবারিক পিকনিক স্পট। সব মিলিয়ে এ মসজিদ কাসাব্লাঙ্কার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র এবং মরক্কোর অন্যতম দর্শনীয় স্থান।

শেখ লোৎফুল্লাহ মসজিদ (Sheikh Lotfollah Mosque)

বিশাল একটি দেশ ইরান। এ দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ইতিহাস-ঐতিহ্য,পুরাতত্ত্ব আর সংস্কৃতির বিচিত্র সমৃদ্ধ উপাদান।ইস্ফাহানকে বলা হয় 'নেসফে জাহান' মানে অর্ধ বিশ্ব।সুতরাং বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয় যে এই শহরে রয়েছে ঐতিহাসিক বহু নিদর্শন এবং প্রাণবন্ত ও মনোরম দৃশ্যাবলি। হাখামানেশিদের সময় ইস্ফাহান শহরে ছিল শাসকদের রাজকীয় বাসভবন। বিভিন্ন শহরের সঙ্গে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্টও ছিল ইস্ফাহান শহর।

শেখ লুৎফুল্লাহ ইরানের সাফাভী শাসনামলে লেবাননের জাবাল আমাল থেকে ইসফাহানে এসে বসতি স্থাপনকারী একজন প্রখ্যাত শিয়া আলেম। সাফাভী শাসক শাহ আব্বাসের পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি ইসফাহানে আগমন করেন। তার নামানুসারেই ইসফাহানের খ্যাতনামা শেখ লুৎফুল্লাহ মসজিদের নামকরণ করা হয়েছে।

শেখ লৎফুল্লাহ মসজিদ - www.islamblogbd.com


মূলত রাজ পরিবারের সদস্যদের নামাজ আদায়ের জন্য এই মসজিদটি তৈরি করা হয়েছিল। নামাজ আদায় করা ছাড়াও মসজিদটি একইসাথে ধর্মতত্ত্ব বিষয়ক বিদ্যালয় বা মাদ্রাসা হিসেবে ব্যবহৃত হত। ১৬০২ সালে মসজিদটির নির্মানকাজ শুরু হয় এবং ১৬১৯ সালে তা নামাজের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

মসজিদটির দেওয়ালে দেওয়ালে বিভিন্ন নকশা, মোজাইক ও ক্যালিওগ্রাফির মাধ্যমে মসজিদটিকে এক অপূর্ব সৌন্দর্য প্রদান করা হয়েছে।

মসজিদটিতে প্রবেশ করতে প্রথমেই একটি করিডর পার হওয়ার প্রয়োজন হয়। বাইরের ধাঁধাঁলো আলো থেকে ভেতরের হালকা আলোতে চোখকে সহনীয় করে নেওয়ার জন্যই এই করিডরটির উদ্ভাবনা।

মসজিদটির ১৩ মিটার ব্যাসের গম্বুজটি বিচিত্র নকশায় সজ্জিত। ৩২ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট গম্বুজটির বিভিন্নদিকে ষোলটি জানালা রয়েছে। অভিন্ন আকার-আকৃতির এই জানালাগুলো মসজিদটির মূল নামাজকক্ষে সমানভাবে আলো সরবরাহ করে।

কোন প্রকার বাহির আঙ্গিনা ও মিনার বিহীন এই মসজিদটি উস্তাদ মুহাম্মদ রেজা ইসফাহানীর তত্ত্ববধানে নির্মিত হয়। সাফাভী শাসনামলের এই স্থাপত্য নিদর্শনটি সাফাভীদের এই রাজধানী শহরের অন্যতম প্রধান এক পর্যটন আকর্ষন।

আল আকসা মসজিদ (Al aqsa mosque)

ফিলিস্তিনের আল আকসাকে মুসলমানদের পবিত্র স্থান বলে ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো। তাদের পাসকৃত এক প্রস্তাবনায় বলা হয়, জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদের ওপর দখলদার ইসরাইলের কোনো অধিকার নেই, আল আকসা মুসলমানদের পবিত্র স্থান।এটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য ও বিশ্বসমাজে সর্বজনবিদিত বিষয়ও। যদিও এটিকে দখলদার ইহুদিরা তাদের মন্দির দাবি করে।হানাদার ইসরাইল বাহিনী অন্যায় আগ্রাসন ও মানবতাবিরোধী আচরণ করে যাচ্ছে।

আল আকসা বা বায়তুল মোকাদ্দাস হচ্ছে- মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রথম কেবলা এবং মক্কা ও মদিনার পর তৃতীয় পবিত্র স্থান। হজরত রাসূলে করিম (সা.) মক্কার মসজিদুল হারাম, মদিনার মসজিদুন্নবী ও বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদের উদ্দেশে সফরকে বিশেষভাবে সওয়াবের কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যা অন্য কোনো মসজিদ সম্পর্কে করেননি।

al aqsa mosque
আল আকসা মসজিদ - www.islamiblogbd.com

বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদ বা আল আকসা মসজিদ এবং তার আশপাশের এলাকা বহু নবীর স্মৃতিবিজড়িত। এ পবিত্র নাম শুধু একটি স্থানের সঙ্গে জড়িত নয় বরং এ নাম সব মুসলমানের ঈমান ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।

নীল মসজিদ (Blue Mosque)

blue mosque
নীল মসজিদ - www.islamiblogbd,com

ইস্তাম্বুলের আকাশে দিগন্ত ছোঁয়া এক সৌন্দর্যপুর্নর এই নীল মসজিদ।ছয়টি মিনার দিয়ে তৈরি এটি একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা যা রাজকীয় শহরটিকে আরো আকর্ষনী করেছে। এটি ১৬০৯ থেকে ১৬১৯ সালের মধ্যে অটোমান শাসক প্রথম আহমেদের রাজত্বকালে একটি গম্বুজ এবং অর্ধ-গম্বুজগুলির একটি সিরিজে নির্মিত হয়েছিল। গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল গম্বুজ থেকে নিচু গম্বুজগুলির সুন্দর সাজানো। ক্যাসকেডের পাশাপাশি, ফুল, গাছ এবং ২০০০০ নীল ইজনিক টাইলস সিলিং এবং মেঝে আস্তরিত করা হয়ে যার নীলাভ আভা শহরে যে কোন প্রান্ত থেকে দেখা যায়। নীল মসজিদ সম্পর্কে আরো জানতে ক্লিক করুন

আকসুনকুর মসজিদ (Aqsunqur Mosque)

Aqsunqur Mosque

চৌদ্দ শতকের শুরুতে হতে আকসুনকুর মসজিদটি মিশরের রাজধানী কায়রোতে গর্বের সাথে দাঁড়িয়েছে। একটি স্পষ্ট অটোমান শৈলীর প্রতিফলন।সম্পুর্ন মসজিদটি ইজনিক টাইলসের সাহায্যে তৈরী।এখানে আছে অসংখ্য সারিবদ্ধ সাইপ্রেসের মনোমুগ্ধকর বিভিন্ন গাছ। ফুলদানিতে সাজানো টিউলিপের সমারহ।মসজিদে এর প্রতিষ্ঠাতা শামস এল-দীন আকসুনকুর তার নামানুসারে মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে।এই মসজিদ চত্ত্বরে তার এবং তাঁর পুত্রদের সমাধি রয়েছে।

আল হারাম মসজিদ (Al Haram Mosque)

Al Haram Mosque

সৌদি আরবের মক্কা শহরে অবস্থিত, পবিত্র মসজিদ এবং ইসলামের অন্যতম প্রধান মসজিদ।কারণ এটি কোরআন দ্বারা নির্দেশিত আল্লাহর উপাসনার জন্য নির্মিত প্রথম ঘর হিসাবে নামকরণ করা হয়েছে। আল হারাম কেবল বিশ্বের বৃহত্তম মসজিদই নয়, এটি সবচেয়ে পবিত্র হিসাবে বিবেচিত হয়। ৪,০০,৮০০ বর্গমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই মসজিদ হজ্ব, পালনের সময় এবং মুসলমানদের জন্য একটি বাধ্যতামূলক ধর্মীয় দায়িত্বের সময় প্রায় ৪০ মিলিয়ন লোককে স্থান দিতে পারে।

উবুদিয়া মসজিদ (Ubudiah Mosque)

Ubudiah Mosque

কুয়াল কংসসার রাজকীয় শহর উবুদিয়া মসজিদটি মালয়েশিয়ার সবচেয়ে সুন্দর উপাসনা স্থান হিসাবে বিবেচিত হয়। এটি চারটি মিনার এবং একটি সোনার গম্বুজ দ্বারা গঠিত, সুলতান ইদ্রিস মুশিদুল আজম শাহের কমান্ডে ব্রিটিশ স্থপতি আর্থার বেনিসন হুবাক দ্বারা নকশা করা হয়েছিল। সুলতান একটি অসুস্থতা থেকে নিরাময়ের জন্য ধন্যবাদ হিসাবে দুর্দান্ত সৌন্দর্যের একটি মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আজ, এটি পেরাক রাজ্যের সকল মুসলমানের কাছে গৌরবের প্রতীক।

উজির খান মসজিদ (Wazir Khan Mosque)

Wazir Khan Mosque

পাকিস্তানের উত্তর দিকের প্রাচীন শহর লাহোরে অবস্থিত, এই অঞ্চলের ব্যস্ততম একটি রাস্তায় উজির খান মসজিদটি ১৭ শতকের পর থেকে দাঁড়িয়ে আছে এবং এই শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। ফ্রেস্কো পেইন্টিংস এবং টাইলস সহ মসজিদটি অভ্যন্তরীণ এবং বাইরে উভয়ই আকৃষ্ট হয়েছে, এতে প্রধানত কোবাল্ট, সেরুলিয়ান নীল, সবুজ, কমলা, ইয়েলো এবং বেগুনি বর্ণ রয়েছে। কাশ্মীরি বাজারকে উপেক্ষা করে দেখা শীর্ষস্থান থেকে নেওয়া দৃশ্যটি লাহোরের অন্যতম দম ফেলার এক জায়গা।

কর্ডোবার মসজিদ-ক্যাথেড্রাল (Mosque-Cathedral of Cordoba)

Mosque-Cathedral of Cordoba

দক্ষিণ স্পেনের প্রাণকেন্দ্রগুলির মধ্যে কর্ডোবা মসজিদটি এখানে মুরিশ স্থাপত্যের অন্যতম সেরা উদাহরণ। যদিও বিল্ডিংটি মূলত ৬ষ্ঠ শতাব্দীর ক্যাথলিক গীর্জা ছিল।যখন ইসলামী সালতানাত ৮ম শতাব্দীতে স্পেনে ছড়িয়ে পড়েছিল।এটি কনস্টান্টিনোপল এবং দামেস্কের জাঁকজমককে প্রতিদ্বন্দ্বী করার জন্য নির্মিত ৩০০ ইউরোপীয় মসজিদের একটিতে পরিণত হয়েছিল। ৭১১ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম ও খ্রিস্টানদের মধ্যে অর্ধেকভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।পড়ে এটিকে ১৬ শতকে রোমান ক্যাথলিক চার্চে রূপান্তরিত করা হয়েছিল।




No comments:

Post a Comment